গাজীপুরের ফলে ‘আতঙ্কে’ সিলেট আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৩

গাজীপুরের ফলে ‘আতঙ্কে’ সিলেট আওয়ামী লীগ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পরাজয়ের ভয় তাড়া করছে সিলেট সিটিতেও। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে বিজয়ী করা নিয়ে নেতাকর্মীর কথায়ও মিলছে শঙ্কার সুর।

অবশ্য অধিকাংশ শীর্ষ নেতাই বলছেন, গাজীপুরে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ক্যারিশমায় মেয়র হয়েছেন তার মা জায়েদা খাতুন। সিলেটে সে রকম কিছু হবে না, এর পরিবেশও নেই। এখানে ক্যারিশমা দেখানোর মতো কোনো শক্তিশালী ম্যাজিকম্যান প্রার্থীও নেই। তবে এখন থেকে সাবধান ও সতর্ক না হলে গাজীপুর ফলাফলের প্রতিফলন ঘটার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। তারা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে সিলেট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছয়ফুর রহমান ওরফে ছক্কা ছয়ফুর কীভাবে আওয়ামী লীগ নেতা ইফতেখার হোসেন শামীমকে পরাজিত করেছিলেন তার উদাহরণ দিচ্ছেন।

১৯৯০ সালে সিলেট সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছয়ফুর রহমান জয়ী হয়ে ইতিহাস তৈরি করে তুমুল হইচই ফেলে দেন। পেশায় বাবুর্চি ও ঠেলাচালক হয়ে ইউপি নির্বাচন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত করেন ছয়ফুর। একজন সুবক্তা হিসেবে তার রসিকতাপূর্ণ বক্তব্য, মজার মজার নানা উদ্যোগে কথা শুনতে লোকজন ভিড় করতেন নির্বাচনী প্রচারণায়। তাকে সমাবেশ করাতে উল্টো মাইক ভাড়ার টাকা দিতে হতো তাকে। নানা কারণে ওই সময়ে হেভিওয়েট প্রার্থীদের ওপর বিগড়ে যান ভোটাররা। সাদামাটা লোকটিকে ডাব প্রতীকে ৫২ হাজার ভোট দিয়ে বিজয়ী করেন ভোটাররা। অস্বাভাবিক ও অভূতপূর্ণ সেই বিজয়ের পর তাকে লোকজন ‘‌ছক্কা ছয়ফুর’ নাম দেন।

গত কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেলে কেউ তাকে খুব একটা স্মরণ করেননি। কিন্তু এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাকে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী সরে দাঁড়ানোর কারণে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী না থাকায় ছয়ফুরের কথা উঠছে। গত শুক্রবার নগরীর রিকাবী বাজারের একটি স্টলে বসে চা পান করছিলেন কয়েকজন। প্রসঙ্গক্রমে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একজন বলেন, ‘ইবার নৌকা এমনিই পাস খরব। লগে ভালা প্রার্থী নাই। কিন্তু ছক্কা ছয়ফুরর লাখানও অইত পারে।’

শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় এবার সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান অনেকটাই নির্ভার। তিনি ও তার দল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে শক্তিশালী মনে করেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আরিফুল হক মাঠে না থাকার পরও প্রচারণায় কমতি নেই নৌকা প্রতীকের। কিন্তু গাজীপুর নির্বাচনের ফলাফল দেখে নেতাকর্মীর মধ্যে ভয় ও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি অনেকে ছক্কা ছয়ফুরের বিজয়ের উদাহরণ দিচ্ছেন। যদিও ওই ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও দাবি করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

গাজীপুরের ফলাফলের ঢেউ সিলেটে লাগলেও এ নিয়ে তারা চিন্তিত নন বলে মনে করেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিজিত চৌধুরী। তিনি বলেন, সিলেট ও গাজীপুরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সেখানে আওয়ামী লীগ ও সাবেক আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই হয়েছে। সিলেটে আওয়ামী লীগের সঙ্গে লড়াইয়ে সে রকম কেউ নেই।

তবে গাজীপুরের ফল দেখে সিলেটে উৎফুল্ল জাতীয় পার্টি। দলের প্রার্থী শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুলকে নিয়ে ক্যারিশমা দেখানোর চেষ্টা করছে দলটি। তাকে কেউ কেউ ছক্কা ছয়ফুরের মতো সমর্থন পাওয়ারও প্রত্যাশা করছেন।

নজরুল ইসলাম বাবুল জানান, তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটসহ সাধারণ মানুষের ভোট পাবেন, সবার সাড়া পাচ্ছেন। পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

জাপা প্রার্থী ও গাজীপুরের ফলের বিষয়ে দলের কেউ চিন্তিত নন বলে দাবি করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি। এক হয়ে কাজ করছি। মানুষ এখন অনেক স্মার্ট। তারা জানে কীভাবে কার মাধ্যমে উন্নয়ন সম্ভব হয়। ছক্কা ছয়ফুরের বিষয়টি এখন টানলে তা ভুল হবে।

নির্বাচনে জাপার বাবুলকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তিনি কয়েক বছর আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০২০ সালে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ব্যবসায়ী হিসেবে তার পরিচিতি থাকলেও রাজনীতিতে খুব একটা অবস্থান গড়তে পারেননি। এ অবস্থায় সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অনুকূল পরিবেশ পেয়েছেন তিনি।

বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বাবুল আওয়ামী বিরোধী বলয়ের সব ভোট পাবেন দাবি করে জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সিসিক নির্বাচনে বাবুলের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, বাবুল ক্যারিশমা দেখাবেন। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, তাতে আশা করছি সফল হবো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ