ঢাকা ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:০১ পূর্বাহ্ণ, মে ২১, ২০২৩
ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরিমাপের ওপর প্রশিক্ষণে জার্মানি যাচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্তারা। যদিও কারিগরি এ কাজে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। উপেক্ষা করা হয়েছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরিমাপে বিশেষজ্ঞ তৈরির ঋণ প্রদানকারী ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার পরামর্শও। অনেকে বলছেন, পাউবো, মন্ত্রণালয়ের সাতজনসহ মোট আটজন আসলে প্রশিক্ষণের নামে জার্মানি ঘুরতে যাচ্ছেন।
১৫ মে প্রকাশিত সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, ২২ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) এস এম আজিয়র রহমান, পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, নকশা ও গবেষণা) আমিরুল হক ভূঁইয়া, উপসচিব সুজিত হাওলাদার, বাংলাদেশ আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক আঞ্চলিক সেবা কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান, পরিচালক (ভূতত্ত্ব) ড. আনোয়ার জাহিদ, প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহতাব হোসেন ও আলমগীর হোসেন এই প্রশিক্ষণ গ্রহণে জার্মানিতে অবস্থান করবেন।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান বলেন, আমি এই মন্ত্রণালয়ে নতুন এসেছি। তা ছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পাউবো। তবু বিষয়টির খোঁজ নেব।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক আঞ্চলিক সেবা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পরিমাপের জন্য ৯০৫টি স্থানে টেলিমেট্রি সিস্টেমে (সর্বাধুনিক প্রযুক্তি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য পেতে ডাটা লগার বসানোর উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে ডাটা লগার বসানোর কাজ সম্পন্ন করেছে একটি সেবা নামে জার্মান কোম্পানি। যাদের বাংলাদেশি অংশীদার অভারসিস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। কিন্তু কাজ শেষের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ৭৬টির বেশি ডাটা লগার ঠিকঠাক কাজ করছে না। জার্মান কোম্পানি ও অর্থ জোগানদাতাদের পরামর্শে দেশীয় বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য এ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আগামী জুনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এখনো একজন বিশেষজ্ঞও তৈরি হয়নি। মেয়াদের সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে না পারলে মেশিনপত্র নষ্ট হলে জার্মানি পাঠাতে হবে সচল করতে, এমনকি এর জন্য সময় ও অর্থের প্রয়োজন হবে, যা রাষ্ট্রের জন্য কুফল ছাড়া সুফল বয়ে আনবে না। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে বাংলাদেশি যে কোম্পানি এখন কাজ করছে, তারাও দায়িত্ব নেবে না।
প্রশিক্ষণে কাদের পাঠানো উচিত, কোন কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ পেলে প্রকল্পের উপকারে আসবে, সে বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মশিউরের কাছে একটি চিঠি লেখেন আনোয়ার জাহিদ। চিঠিতে উল্লেখ করেন, মন্ত্রণালয়ের সূত্রে উল্লেখিত আট কর্মকর্তাকে জার্মানিতে প্রশিক্ষণে যেতে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপাত্ত সংগ্রহের আওতাভুক্ত ভূগর্ভস্থ পানির উল্লেখিত ৯০৫টি পর্যবেক্ষণ কূপের উপাত্ত সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকাণ্ড বোর্ডের ভূগর্ভস্থ পানিবিজ্ঞান দপ্তর এবং এর আওতাধীন বিভাগ ও উপবিভাগগুলোর অধীনে ভূতত্ত্ববিদগণের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত। ফলে প্রকল্প শেষে দপ্তরগুলোতে স্থায়ীভাবে নিয়োজিত ভূতত্ত্ববিদগণকেই স্বয়ংক্রিয় কূপগুলোরও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে বিধায় ওই বিষয়ে ভূতত্ত্ববিদগণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকাণ্ড সহজতর হতো। বিষয়টি এর আগেও মাধ্যমে আপনাকে অবহিত করা হয়েছিল। অথচ উপরোক্ত টেকনোলজি ট্রান্সফার ও প্রশিক্ষণে পর্যবেক্ষণ কূপে টেলিমেট্রিসহ ডাটা লগার ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিম্নস্বাক্ষরকারী ব্যতিত সরাসরি নিয়োজিত কোনো ভূতত্ত্ববিদ মনোনয়ন পাননি।
এমতাবস্থায়, আনোয়ার জাহিদ বোর্ডের তথা জাতীয় কাজের স্বার্থে জার্মানিতে টেকনোলজি ট্রান্সফারের লক্ষ্যে আয়োজিত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য তার পরিবর্তে বোর্ডের ভূগর্ভস্থ পানিবিজ্ঞান বিভাগ কিংবা উপবিভাগসমূহের একজন ভূতত্ত্ববিদকে মনোনয়ন প্রদানে সুপারিশ করেন।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের পরিচালক মশিউর রহমান, পরিচালক (ভূতত্ত্ব) ড. আনোয়ার জাহিদ ও সহকারী প্রোগ্রামার মো. আলমগীর হোসেনসহ যে তিনজন যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ তৈরি প্রশিক্ষণে, তাদের দিয়ে এ প্রকল্পের কোনো কাজে আসবে না। কারণ হিসেবে পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প পরিচালকের পক্ষে এ কাজে সহায়তা করার পর্যাপ্ত সময় কিংবা সুযোগ নেই। ড. আনোয়ার জাহিদের চাকরির মেয়াদ বেশিদিন না থাকায় দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার সুযোগও নেই। সহকারী প্রোগ্রামার মো. আলমগীর হোসেন অন্য বিভাগে পদায়নে আছেন।
সূত্র জানায়, নতুন প্রযুক্তি হওয়ায় দেশের কেউ এ কাজে বিশেষজ্ঞ না থাকায় সামান্য ত্রুটি হলেও সে বিষয়ে জার্মান বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হয়। এমনকি যন্ত্রে কোনো ত্রুটি থাকলেও সে জন্য পুরো যন্ত্রটিকে জার্মানি পাঠাতে হয়। ফলে যারা এ প্রযুক্তি নিয়ে সরাসরি কাজ করেন, তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রশিক্ষণ নিলেও সেই জ্ঞান প্রয়োগের কোনো সুযোগই পাবেন না।
এ নতুন টেকনোলজি শিখতে যাওয়ার তালিকায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিব এবং উপসচিবের জন্য এ প্রশিক্ষণ প্রমোদ ভ্রমণ ছাড়া কিছু নয় বলেও অভিযোগ করেছেন পাউবোর কর্মকর্তারা। প্রায় প্রতিটি বিদেশ প্রশিক্ষণেই মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক কর্মকর্তা যুক্ত হন, যাদের সামান্যতম সংশ্লিষ্টতা থাকে না সে বিষয়ে। আবার যোগসাজশের মাধ্যমে অনেক কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণে যান নিয়মিত।
এর আগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর একই সফরের ওপর আরেকটি প্রজ্ঞাপন হয়, যা সে সময়ে ডলার সংকটের কারণে বাতিল হয়। সে সময় প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জানা যায়, নভেম্বরের ২২ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) এস এম আজিয়র রহমান, পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্বাঞ্চল) মো. মাহবুর রহমান, উপসচিব খাইরুন নাহার, বাংলাদেশ আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক আঞ্চলিক সেবা কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান, পরিচালক (ভূতত্ত্ব) ড. আনোয়ার জাহিদ, প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহতাব হোসেন ও মো. আলমগীর হোসেনের জার্মানিতে অবস্থান করার কথা ছিল।
প্রকল্প পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, জার্মানি থেকে নতুন যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে স্থাপন সম্পন্ন বিষয়েই প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছি। তা ছাড়া কোম্পানির আর কী কী যন্ত্রপাতি আছে, যা আমাদের কাজে লাগবে, তাও জানা যাবে। মন্ত্রণালয় থেকে যারা যাচ্ছেন তারা প্রকল্প সবসময় পর্যবেক্ষণ করছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক শংকর দাশ
উপ-সম্পাদক বিন্দু মজুমদার
অফিস জিন্দাবাজার, সিলেট।
মোবাইল: ০১৭১২-৭৫৭২০৭, ০১৭১৯-৩৩৪৮৪৭
ই-মেইল: shonkardas@gmail.com
Design and developed by WEB-NEST-BD