সিলেটে আতংকের নাম ‘কিশোর গ্যাং’

প্রকাশিত: ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৩

সিলেটে আতংকের নাম ‘কিশোর গ্যাং’

নিউজ ডেস্ক : সিলেটে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’। এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা এই নামটি এখন সাধারণ মানুষের কাছে এক আতংকের নাম। সারাদেশের মতো সিলেটেও নাড়িয়ে দিচ্ছে এ কিশোর গ্যাং। ভয়ঙ্কর এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনি, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাইসহ মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে যাচ্ছে নগরীতে। এসব অপরাধের প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের হাতে নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফলে কিশোর গ্যাংদের হাতে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন পাড়া-মহল্লার মানুষ।

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের ব্যস্ততম রিকাবীবাজার পয়েন্টে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের হাতে ছুরিকাঘাতে সাংবাদিক পুত্রসহ দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক ছায়ায় উঠতি বয়সের কিশোরেরা সহিংসতাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, এসব কিশোর অপরাধী ও কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার রয়েছে। কোথাও কোনো অপরাধের খবর পেলে তারা সাথে সাথে অ্যাকশনে যাচ্ছেন। কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না অপরাধীদের। জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এসএমপি সূত্র জানায়, গেল বছর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬টি থানা এলাকায় বেপরোয়া এই কিশোর গ্যাং এর অপতৎপরতা থামাতে একটি তালিকা তৈরী করা হয়। এ তালিকায় ২২০ জন তরুণের নাম ‘কিশোর গ্যাং’র সাথে জড়িত দেখা যায়। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কথিত বড় ভাইয়েরা এদের আশ্রয়ে দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি সিলেটে কিশোর গ্যাংয়ের অরতৎপরতায় এখন প্রকট হয়ে ওঠেছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের তালিকা অনুযায়ী ১৫-২০ টি ‘কিশোর গ্যাং’ নগরীতে রয়েছে। যাদের সদস্য অন্তত আড়াই শ’র উপরে। যাদের মধ্যে ২২০ জনের তালিকা এখন মেট্রোপলিটন পুলিশের হাতে রয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, সিলেট নগরীর লামাবাজার, মির্জাজাঙ্গল, কুয়ারপার, ওসমানী মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, শামীমাবাদ, রিকাবীবাজার ও উপশহর কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম আস্তানা। ওই এলাকাগুলোতে আছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। এছাড়া মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, কুমারপাড়া, শাহীঈদগাহ, মিরাবাজার, তেরোরতন, টিলাগড়সহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের আস্তানা। এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া। তারা বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান করে ছাত্রীদের উত্যক্ত করা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন, ছিনতাই, জুয়া, মারামারি, নতুবা গ্রুপিং রাজনৈতিক নেতাদের মিছিল মিটিং লোক ভারী করা ‘কিশোর গ্যাং’র মূল নেশা। বিভিন্ন সময় ‘কিশোর গ্যাং’র সদস্যরা আইনের আওতায় আসলেও আড়ালেই থেকে যায় তাদের গডফাদাররা।

ইতোমধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে দু’টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কিশোর গ্যাংসের সদস্যরা প্রকাশ্য কুপিয়ে এসব খুন করেছে। তাদের হাতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এরপর পুলিশ ও র‌্যাব’র পক্ষ থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে চিহ্নিত ১০-১২ জনকে আটক করেছিল। এতে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তবে- সম্প্রতি তারা এসে ফের আস্তানা গেড়েছে মেডিকেলসহ আশপাশ এলাকায়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে পুলিশ যেহেতু ‘কিশোর গ্যাং’র তালিকা করেছে। পুলিশের উচিৎ ওই তালিকা থানায় থানায় টানিয়ে দেয়া। পাশাপাশি এসব কিশোরের অভিভাবকদের উচিত খবর নেয়া- তাদের সন্তান পুলিশের তালিকায় রয়েছে কি-না।

সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, যারা কিশোরদের শেল্টারদেন তাদেরও চিন্তা করা প্রয়োজন- এই কিশোরর বেপথে চলে যাচ্ছে। কথিত বড়ভাইদের কারণেই দিন দিন ‘কিশোর গ্যাং’ ভয়ংকর হয়ে ওঠছে। সবাই সচেতনভাবে কাজ করে ‘কিশোর গ্যাং’ বিলুপ্ত করতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ